“One small step for a man, one giant step for mankind”, বলা মানুষটি মারা গেছেন। এ খবর নতুন নয়।
প্রত্যেক শতাব্দীতেই এমন কিছু মানুষ জন্মান, যারা পুরো সময়টাকে একধাপ এগিয়ে দিয়ে যান।
নীল আর্মস্ট্রং তেমনি একজন মানুষ। স্যালুট এই নায়ক কে।.
আরো পড়ুন- চাঁদের মাটিতে মানুষ- মিশন "অ্যাপেলো-১১" (The First Person on the Moon)
চাঁদে মানুষ গিয়েছিলো
কি যায়নি, এটা নিয়ে প্রথম
বিতর্ক জন্ম দেন বিল কেসিং নামক এক লেখক তাঁর নিজের প্রকাশিত একটি বইতে। তখন
জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা আর্থার সি. ক্লার্ক আর স্ট্যানলি কুবরিক কে জড়িয়ে বেশ
একটা নাটক প্রস্তাব করেন তিনি, যেটা অনুসারে
মানুষ কখনোই চাঁদে যায়নি, এবং সম্পূর্ণ
অ্যাপোলো মিশনই অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে সাজানো একটি ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্রের পেছনের
মোটিভ হিসেবে বেশ জোরালো কিছু যুক্তি দেন তিনি, যার প্রথমেই ছিলো তৎকালীন রাশিয়া-আমেরিকার
শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। এছাড়া সমগ্র পৃথিবীতে আমেরিকার একাধিপত্য বাড়াতে এমন একটা
কিছুর প্রয়োজন ছিলো বলে তিনি উল্লেখ করেন। তার এ যুক্তিগুলো একদিক দিয়ে ঠিক,
কারণ অ্যাপোলো মিশন
আমেরিকা আর নাসা কে এক ধাক্কায় এমন এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলো, যা এর আগে কেউ পারেনি।
এরপরের দীর্ঘ
চল্লিশ বছরে প্রচুর সমর্থনে পুষ্ট হয়েছে কেসিং-এর মতবাদ। মিডিয়া বারবার আলোড়িত
হয়েছে এই ঘটনা নিয়ে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, সার্বজনীন কোন বিখ্যাত বিজ্ঞানী বা সংশ্লিষ্ট
কেউ কিন্তু কখনো এ ব্যাপারে কোন উচ্চবাচ্য করেনি। অভিযোগকারীদের একটা বড় অংশই
মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। এছাড়া আমেরিকার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়ার কোন মহাকাশ
সংস্থা/বিজ্ঞানীর পক্ষ থেকেও এমন কোন দাবী জানানো হয়নি। তবে হ্যাঁ, রাশিয়ার ২৮% মানুষ বর্তমানে বিশ্বাস করে যে
অ্যাপোলো মিশন একটি বড় ধরনের ষড়যন্ত্র ছিলো।
মূল টপিকে চলে
যাই। অভিযোগকারীদের অভিযোগগুলোর বেশিরভাগই চাঁদের তোলা বিভিন্ন ছবি/ভিডিও উপর
ভিত্তি করে দাঁড় করানো। এছাড়া রয়েছে অসামঞ্জস্যতা, টেকনিক্যাল ইস্যু। কিছু কিছু খুবই ফালতু
যুক্তিও দাঁড় করানো হয়েছে, যেগুলো কে যুক্তি
নাও বলা চলে। নিচে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু অভিযোগ আর তাদের প্রত্যুত্তর তুলে ধরা হয়েছে। এবং যুক্তিযুক্ত ব্যখ্যার একটি ভিডিও দেওয়া হল- ক্লিক করুন
#ফটোগ্রাফি নিয়ে
অভিযোগঃ এই সংক্রান্ত অভিযোগ গুলি পয়েন্ট করে আলোচনা করা হল।
অভিযোগ ১. শুটিং গেম
খেলার সময় আমরা প্রায়ই ক্রসহেয়ার ব্যবহার করি, যা মূলত ডিরেকশান ঠিকঠাক রাখতে ব্যবহৃত হয়।
অ্যাপোলো মিশনে ব্যবহৃত ক্যামেরাগুলোর লেন্সের সামনে এই ক্রসহেয়ার যুক্ত একটি
কাঁচের প্লেট ছিলো। তাই ছবি তুললে স্বাভাবিকভাবেই ওই ক্রসহেয়ার সহ চলে আসতো।
কিন্তু চাঁদের কিছু ফটোতে দেখা যায়, ক্রসহেয়ারের ওপর ছবি চলে এসেছে, অর্থাৎ উলটো ওভারল্যাপ হয়েছে যেটা কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাই এখানে অভিযোগ,
ছবিগুলো আলাদা করে পেস্ট
করা হয়েছে।
উত্তরঃ শুধুমাত্র
স্ক্যান করা ও এডিট করা ফটোগুলোতেই এই সমস্যাটা দেখা যায়। মূল ছবিগুলো একটু
ভালোভাবে বিশ্লেষণ করলেই যে কেউ এর ব্যাখ্যাটা বুঝতে পারবে। মাত্র ০.১ মিলিমিটার
পুরু ক্রসহেয়ার কোন কোন জায়গায় উজ্জ্বল ব্যাকগ্রাউন্ডের কারণে ঝাপসা হয়ে
গিয়েছে, যেটা ওভার
এক্সপোজারের কারণে যে কোন ছবিতেই হতে পারে।
আরেকটা কথা হলো,
যদি পুরো ব্যাপারটা
বানানোই হয়, তাহলে খামোখা
ক্রসহেয়ার সম্বলিত ক্যামেরারই বা কি দরকার ছিলো? আর যদিও বা সেটা ব্যবহার করা হলো, তাহলে সরাসরি শুটিং করলেই তো হতো, কি দরকার ছিলো এডিট করে কাট-পেস্ট করার মতো
অহেতুক একটা ঝামেলা করার?
অভিযোগ ২. কোন ফটোতেই
আকাশে কোন তারা দেখা যায়নি, এমনকি পরবর্তীতে
অ্যাপোলো ১১ এর অভিযাত্রীদের তারার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, তাঁরা বলেছিলেন যে কোন তারা দেখতে পান নি
আকাশে।
উত্তরঃ
মহাকাশচারীরা বলেছেন তাঁরা শুধু চাঁদে অবস্থানকালে ‘দিনের বেলা’ তারা দেখতে পান নি, কিন্তু রকেট থেকে যাত্রাপথে দেখতে পেয়েছিলেন।
আর শুধু অ্যাপোলো ১১ না, অ্যাপোলো ১৭
পর্যন্ত প্রত্যেকটি অভিযানেই চাঁদের নামা হয়েছিলো দিনের বেলায়। সে সময় চাঁদের
পৃষ্ঠে সূর্যরশ্মির প্রতিফলনের কারণেই তারা অদৃশ্য ছিলো। অভিযাত্রীদের হেলমেট-এর
গ্লাস ও ক্যামেরার লেন্স ওই রশ্মি প্রতিরোধ করার মতো এক্সপোজার দিয়ে তৈরি করা
হয়েছিলো, যার ফলে চাঁদের
পৃষ্ঠের তুলনায় আকাশ নিকষ অন্ধকার দেখা যায়। এটা একটা প্রমাণিত ঘটনা, কারণ উজ্জ্বলভাবে আলোকিত ব্যাকগ্রাউন্ড
সার্ফেসের উজ্জ্বলতার কারণে সম্পূর্ণভাবে অন্ধকার হয়ে যেতে পারে। একই কারণ
উজ্জ্বলভাবে আলোকিত কার পার্কিং-এ দাঁড়িয়ে আপনি আকাশে তারা দেখতে পারবেন না।
এছাড়া সবচেয়ে
বড় প্রমাণ হলো, বিভিন্ন সময়ে
তোলা পৃথিবীর বিভিন্ন ছবিতেও একই কারণে তারাহীন আকাশ দেখা গিয়েছে।
তবে অ্যাপোলো ১৫
এবং ১৬ তে আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি ব্যবহার করে লং-এক্সপোজারের সাহায্যে কিছু ছবি
তোলা হয়েছিলো, যেগুলোতে তারা
আবছাভাবে চোখে পড়ে।
অভিযোগ ৩. কিছু কিছু ছবির আলো-ছায়ায় কৃত্রিমতা ও অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়। কাছাকাছি
দাঁড়ানো দুজন নভোচারীর ছায়ার দৈর্ঘ্যও অনেক বেশি।
উত্তরঃ চাঁদের ছায়া নিয়ন্ত্রিত হয় বেশ কিছু বিষয় দ্বারা, যেমন- সূর্যের প্রতিফলিত আলো, উঁচু-নিচু ভূমি, ধূলা ইত্যাদি। এর ফলে বিভিন্ন আকৃতির ছায়া
তৈরি হতে পারে।এ অভিযোগটি সম্পূর্ণভাবে খন্ডন করেছে মিথবাস্টারস নামক একটি টেলিভিশন
প্রোগ্রাম তাদের ‘নাসা মুন
ল্যান্ডিং’ পর্বে (ক্লিক করে দেখুন) । তারা
কৃত্রিমভাবে একটি চাঁদের মতো স্থান তৈরি করে পরীক্ষা করে দেখেছে, তেমন পরিবেশে এটা হওয়া খুবই স্বাভাবিক।
অভিযোগ ৪. কিছু ফটোতে একটি পাথরের ওপর C অক্ষরটি দেখা যায়। ছবির শুটিং-এ এই C এলিমেন্টস বা প্রপস বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। তাই এটি একটি শুটিং করা সাজানো
ব্যাপার।
উত্তরঃ C আকৃতিটি
স্পষ্টভাবে বোঝা যায় শুধুমাত্র এডিট করা ও স্ক্যান করা ছবিতে। মূল ছবিতে একে শুধু
একটি সাধারণ পাথরের দাগের মতোই দেখা যায়। এডিট করার সময় ছবির আলো বৃদ্ধি করার
ফলে C স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
অভিযোগ ৫. শুটিং-এর সময় কিছু স্থানে অতিরিক্ত আলো ফেলে হটস্পট তৈরি করা হয়। চাঁদের
একটি ফটোতে এমন কৃত্রিম হটস্পট লক্ষ্য করা গেছে।
উত্তরঃ শিশির কিংবা ভেজা রাস্তা যেভাবে আলোকে প্রতিফলিত করে, চাঁদের বালিও কোন কোন স্থানে সেভাবে আলোকে
প্রতিফলিত করতে পারে। এটি ওই সময় চাঁদের অবস্থান, পরিবেশের উপর নির্ভর করে।
এছাড়া এই হটস্পট শুধু এডিট করা হাই কন্ট্রাস্ট ফটোতেই দেখা যায়। মূল ফটোতে
এমন কিছু লক্ষ্য করা যায় না।
#পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ -এই সংক্রান্ত অভিযোগ গুলি পয়েন্ট করে আলোচনা করা হল।
অভিযোগ ১. গ্যালাক্টিক রেডিয়েশন ও পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের পরে ছড়িয়ে থাকা ভ্যান
অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্ট-এর তেজস্ক্রিয়তার কারণে অভিযাত্রীদের বেঁচে থাকার কথা
নয়।
উত্তরঃ ভ্যান অ্যালেন বেল্ট পার হতে রকেটের সময় লেগেছিলো প্রায় চার ঘন্টা।
বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত আয়নাইজড অ্যালুমিনিয়াম শেল-এর আবরণ ছিলো রকেটে, যা সেই
রেডিয়েশনকে রুখে দিতে সক্ষম। এছাড়া রকেটটি সবচেয়ে কম ঘনত্বের এবং কম শক্তির
স্থান দিয়ে এ বেল্ট অতিক্রম করেছিলো। এর ফলে যাত্রীদের যে তেজস্ক্রিয় চাপ সহ্য
করতে হয়েছিলো, তা নিউক্লিয়ার ফিল্ডে কাজ করা কর্মীদের এক
বছরের তেজস্ক্রিয় চাপের সমান।
এই তেজস্ক্রিয়তা অভিযাত্রীদের দেহে কিছু সমস্যাও তৈরি করেছিলো, যা বরং চাঁদের
যাওয়ারই আরেক প্রমাণ। যেমন- নয়টি অ্যাপোলো মিশনে অংশ নেয়া ৩৬ জন নভোচারীর ৩৩
জনেরই চোখে তেজস্ক্রিয়তার কারণে দ্রুত ছানি পড়েছিলো।
অভিযোগ ২. দিনের বেলা চাঁদের পৃষ্ঠ খুবই উত্তপ্ত থাকে, যা নাসার ব্যবহৃত
ক্যামেরা গলিয়ে দিতে সক্ষম।
উত্তরঃ চাঁদের তাপমাত্রা অত্যধিক হলেও সেখানে তাপ পরিবহনের কোন সরাসরি মাধ্যম
নেই। যেহেতু সেটি একটি বায়ুশূন্য স্থান, তাই বিকিরণ ছাড়া সেখানে
তাপ ছড়ানোর কোন উপায় নেই। সেই বিকিরণ কে প্রতিরোধ করার মতো কোটিং ক্যামেরা ও
লেন্সের ছিলো।
অভিযোগ ৩. চাঁদে বাতাস নেই ভালো কথা, তাহলে সেখানে স্থাপন করা পতাকা কি করে উড়ছে, এমন ছবি তোলা হলো
কিভাবে?
উত্তরঃ যে দন্ডের সাথে পতাকা লাগানো ছিলো, সেটা চাঁদের মাটিতে গেঁথে
দেয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই একটু ভাইব্রেট করে। এটি মোটেই পতপত করে ওড়া নয়। আর
পতাকায় যে ভাঁজ দেখা যায় ছবিতে, সেগুলো তৈরি হয়েছে কারণে গুটিয়ে ভাঁজ করেই
পতাকাটিকে নিয়ে আসা হয়েছিলো।
মিথবাস্টার প্রোগ্রামটিতে এ অভিযোগকে সম্পূর্ণভাবে খন্ডন করা হয়েছে। তারা
দেখিয়েছে, বায়ুশূন্য স্থানে একটি পতাকা এভাবে স্থাপন
করলে একই ঘটনা ঘটে।
আরো পড়ুন-- আমাদের প্রথমে চিন্তা করতে হবে উড়া বলতে কি বুঝছি? উড়া এবং নড়া এক ব্যাপার নয়। পতাকা উড়ছে বলে যে
ভিডিওটি প্রচার করা হয় তা আসলে বাতাসে পতাকা উড়ছে সেরকম নয়। পতাকা মাটিতে লাগানোর
সময় “L” আকৃতির দণ্ডের
নড়াচড়ায় পতাকাটাও নড়ছে। আর যেহেতু চাঁদে বাতাস নেই ফলে বাতাসের বাধাও নেই।
ঘর্ষণহীন পরিবেশে পতাকা বরং পৃথিবীর পরিবেশের চেয়ে বেশিই নড়ছে। এই নড়াচড়ার ভিডিওকে
পতাকার উড়া বলে প্রচার করাটা আসলেই হাস্যকর। তারপরেও এই ব্যাখ্যা যাদের বিশ্বাস
হচ্ছে না তারা এই ভিডিওটি দেখতে পারেনঃ CLICK HERE
অভিযোগ ৪. চাঁদের আবহাওয়ায় তো আর্দ্রতা নেই, তারপরও এর মাটিতে অভিযাত্রীদের পায়ের ছাপ এতো
ভালোভাবে পড়লো কিভাবে? ছবি দেখে মনে হয়
যেন কাদা-মাখা বালিতে পা ফেলা হয়েছে, যা শুধু পৃথিবীতেই সম্ভব।
উত্তরঃ চাঁদে তো আর বাতাস নেই যে ধুলো উড়বে। তাই বছরের পর বছর ধরে ধুলোবালি
একই জায়গায় থেকে অনেকটা কাদার মতোই হয়ে যায়। অ্যাপোলো ১১-এর এডুইন অলড্রিন একে
বলেছেন ‘ভেজা পাউডার বা
বালির মতো’। এ অভিযোগটিও মিথবাস্টার অনুষ্ঠানে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে।
আরো পড়ুন-- যে এই প্রোপাগান্ডা প্রথমবারের মত ছড়িয়েছে, সে এটা দেখায়নি যে, ঐ জুতোটা আসলে ভেতরের জুতো যেটার ছাপ পড়ার কথা
না। বাইরের জুতোটা না দেখিয়ে কী প্রমাণ করতে চায় !
![]() |
এটা ভেতরে পরার জুতো
এটা বাইরে পরার জুতো
|
অভিযোগ ৫. চাঁদে অবতরণের ভিডিও পৃথিবীতেই কোন মরুভূমিতে স্লো-মোশনে করা হয়েছে। যাতে মনে হয় অভিযাত্রীরা চাঁদে আছে। কেননা ভিডিওটা দেখতে সেরকমই মনে হয়।
উত্তরঃ ভিডিও থেকে এটাও দেখা গিয়েছে, অভিযাত্রীদের চলার ফলে এবং যন্ত্র বসানোর ফলে যে ধুলা উড়েছে, তা সাধারণ উচ্চতার চেয়ে বেশি উচ্চতায় উঠেছে।
কারণ চাঁদে এদের ভর অনেক কম। এছাড়া বায়ুশূণ্যতার ফলে এরা যে পথে উপরে উঠেছে,
ঠিক সে পথেই
অর্ধবৃত্তাকারে আবার মাটিতে পতিত হয়েছে। এটা পৃথিবীতে সম্ভব নয়, ধুলা কিছুটা অনিয়মিত আচরণ এখানে করবেই। তাই
ভিডিওটি পৃথিবীতে করার সুযোগ নেই।
এছাড়া অ্যাপোলো ১৫ মিশনে ডেভিড স্কট একটি হাতুড়ি ও পালক একই উচ্চতা থেকে
মাটিতে ফেলে দেখেন যে তারা একই সাথে মাটিতে পড়েছে। এটা চাঁদের বায়ুশূন্যতার
কারণেই সম্ভব হয়েছে।মিথবাস্টার প্রোগ্রামে এ অভিযোগও খন্ডিত হয়েছে।
#যান্ত্রিক অভিযোগ
অভিযোগ ১. চাঁদের অবতরণকারী রকেটের অবতরণের সময় কোন স্ফুলিঙ্গ দেখা যায় নি, চাঁদের মাটিতে কোন গর্তও তৈরি করে নি এটি।
উত্তরঃ এটা নিতান্তই সায়েন্স ফিকশন প্রেমীদের অভিযোগ বলা যায়! বিভিন্ন বইতে
ও সিনেমায় এ ধরনের ‘স্ফুলিঙ্গ
বিচ্ছুরণকারী’ অবতরণ দেখে এ
ধারণাটি করা হয়েছে।
মহাকাশযানের তিনটি অংশ ছিলো, যার মধ্যে শুধু
একটি চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করেছিলো। সেটার ওজন বলতেও ছিলো শুধু নিজস্ব ওজন, যা চাঁদের অভিকর্ষ বলের প্রভাবে আরও কমে
গিয়েছিলো। এবং এর এগজস্ট সিস্টেমও এমন ছিলো না যে আগুন ছড়িয়ে তারপর প্রেসার
কমাতে হবে। খুব ধীরে ধীরে প্রচন্ড মাত্রায় প্রেসারাইজড গ্যাস নজল-এর মাধ্যমে
ছড়িয়ে দিয়ে চাপ কমিয়ে চাঁদে নামা হয়েছিলো। তাই এখানে আগুনের স্ফুলিঙ্গের
প্রশ্নই আসে না। এছাড়া ল্যান্ড করার জন্যে সবসময়ই বেছে নেয়া হয়েছে সবচেয়ে
শক্ত পাথুরে এলাকাকে, যেখানে ধুলা
ছড়ানোর সম্ভাবনাও খুব কম।
আর স্ফুলিঙ্গ যেখানে দরকার ছিলো সেখানে দেখা গিয়েছে, অর্থাৎ পৃথিবী থেকে শাটল নিক্ষেপ করার সময়।
অভিযোগ ২. চাঁদে অবতরণকারী মডিউলের ওজন ছিলো ১৭ টন। এর কোন ছাপ পড়েনি চাঁদের পৃষ্ঠে, কিন্তু অভিযাত্রীদের পায়ের ছাপ পড়েছে।
উত্তরঃ চাঁদের অভিকর্ষের কারণে অবতরণকারী মডিউলের ভর ৩ টনের নিচে নেমে
এসেছিলো। অভিযাত্রীদের ওজনও অবশ্যই এর চেয়ে অনেক কমে গিয়েছিলো, কিন্তু তাদের পায়ের বুটের ক্ষেত্রফল রকেটের ১ মিটার চওড়া ল্যান্ডিং প্যাডের
চেয়ে অনেক কম ছিলো, এর ফলে চাঁদের ধুলোতে তাদের চাপ(প্রতি একক
ক্ষেত্রফলে প্রয়োগকৃত চাপ) অনেক বেশি ছিলো। একটা পিনে চাপ দিলে বেশি ব্যাথা লাগে, কিন্তু দুটো সমান পিনে চাপ দিলে ব্যাথা কম লাগে একই কারণে।
এছাড়া খাঁজকাটা বুটের ছাপের চেয়ে সমতল, চওড়া ল্যান্ডিং
প্যাডের ছাপ চাঁদের এবড়োখেবড়ো পৃষ্ঠের মতনই অনেকটা, যে কারণে এটা সহজে লক্ষ্য করা যায় না।
৩. নভোচারীদের পরিহিত স্পেসস্যুটের অটোমেটিক কুলিং সিস্টেম বায়ুশূন্য কোন
মাধ্যমে কাজ করা সম্ভব নয়।
উত্তরঃ সম্পূর্ণ ভুল। সঠিক ব্যাপার হচ্ছে, বিশেষভাবে তৈরি
করা সে স্পেসস্যুট পৃথিবীর আবহাওয়াতেই ব্যবহার করা সম্ভব নয়, কারণ সেগুলো তৈরি করা হয়েছে সম্পূর্ণ বায়ুশূন্য পরিবেশের জন্যে। এর কুলিং
সিস্টেম স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিলো, যা ৬ বছরের গবেষণার মাধ্যমের আবিষ্কৃত একটি
জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিলো।
আপাতত প্রথম পর্বটি এখানেই শেষ করলাম। পরবর্তি পর্বে আরো কিছু উত্তর দেওয়া হবে। যার লিঙ্ক আপনারা এখানেই পেয়ে যাবেন।
আপাতত নাসার এপোলো মিশনের এই চমৎকার ছবিগুলো (ক্লিক করুন) দেখুন। NASA অনেকগুলো (প্রায়দশ হাজার) ছবি রিলিজ করেছে এপোলো মিশনগুলোর।
এইগুলি হল ওইসব সমালোচনা বা অভিযোগ এর উত্তর। জানিনা এইগুলি দিয়ে আপনাদের মন ভরবে কিনা। তাও আপনাদের দেখানোর ইচ্ছে ছিল তাই দেখালাম।
বিঃ দ্রঃ এই লেখাটির সাথে Bhugol.in কোনো কৃতিত্ব নেই। লেখাটি বাংলাতে লিখেছেন অনিমেষ হৃদয় । তথ্য সূত্র
ছবিসূত্রঃ পাবলিক ডোমাইনে প্রকাশ করা নাসার ফ্লিকার একাউন্ট থেকে সংগৃহীত।
➽ All Copy Right reserved- Bhugol.in (Google Copy Right act)
➽ All Copy Right reserved- Bhugol.in (Google Copy Right act)
আরো পড়ুন- চাঁদের মাটিতে মানুষ- মিশন "অ্যাপেলো-১১" (The First Person on the Moon)
সত্যি কি মানুষ চাঁদে গিয়েছে?- একটি বিতর্কিত পোষ্ট!
চাঁদে প্রথম মানুষ যাওয়া নিয়ে বিতর্কের যুক্তিযুক্ত কিছু উত্তর
Reviewed by ভূগোল প্রেমী
on
জুলাই ২১, ২০১৭
Rating:
