মারিয়ানা ট্রেঞ্চ নিয়ে মানুষের উৎসাহ বহু আগে থেকেই। ১৬৬৮ সালে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমের দ্বীপপুঞ্জে কলোনি স্থাপন করল স্পেনীয়রা। কেবল শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেই ক্ষান্ত হলো না, স্পেনের রাজা চতুর্থ ফিলিপের বিধবা স্ত্রী রানি ‘মারিয়ানা অব অস্ট্রিয়া’র নাম ধার নিয়ে দ্বীপের নামকরণও তাঁরা করল ‘মারিয়ানা আইল্যান্ড’। তবে ঔপনিবেশিক শাসকরা নিশ্চয়ই কল্পনাও করতে পারেননি মারিয়ানা আইল্যান্ডের দ্বীপগুলোর পূর্বপাশের জায়গাটিই পৃথিবীর গভীরতম স্থান। সুগভীর খাদটির অবস্থান প্রশান্ত মহাসাগরের ঠিক পশ্চিমে। দীর্ঘ গবেষণার পর আধুনিক বিজ্ঞানীরা জেনেছেন_প্রাকৃতিক নানা বিপর্যয়ে সমুদ্রের তলদেশে শত শত বছরে সংগঠিত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে তৈরি হয়েছে মারিয়ানা প্লেট। দ্বীপগুলোর অবস্থান এসব প্লেটের ওপরেই। আর দ্বীপের খুব কাছাকাছি হওয়ায় সবচেয়ে গভীর খাদ মারিয়ানা ট্রেঞ্চের নামও স্বাভাবিকভাবেই হয়ে গেছে রানি মারিয়ানার নামেই।
এটির গভীরতা মাপার তোড়জোড় শুরু হয় প্রায় দেড়শ বছর আগে। ১৮৭২ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৮৭৬ সালের মে মাসের মধ্যে বেশ কয়েকবার ‘চ্যালেঞ্জার এক্সপিডিশন’ নামের পরীক্ষামূলক অভিযানের মাধ্যমে গভীরতা মাপার চেষ্টা চালানো হয় খাদটির। এবড়ো-খেবড়ো বিশাল এই এলাকায় সেই আমলে সীমিত প্রাযুক্তিক সুবিধা নিয়ে অভিযানটি সফল করতে সময় লেগেছিল কয়েক বছর। তখন জানা গিয়েছিল,খাদটির সর্বোচ্চ গভীরতা প্রায় ২৬ হাজার ৮৫০ ফুট। অভিযানের প্রধান বিজ্ঞানী ছিলেন ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গের প্রাকৃতিক ইতিহাসবিদ এবং সামুদ্রিক প্রাণীবিজ্ঞানী স্যার চার্লস ওয়াইভিল থমসন। ১৮৭২ সালের ২১ ডিসেম্বর অভিযান শুরু করা হয়েছিল
ইংল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলীয় শহর পোর্টসমাউথ থেকে। ক্যাপ্টেন জর্জ নারেসের নেতৃত্বে অভিযানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ব্রিটিশ নৌবাহিনীর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা।
১৮৯৯ সালে চালানো আরেক অভিযানে পাওয়া গেল নতুন তথ্য মারিয়ানা ট্রেঞ্চ প্রায় ৩১ হাজার ৬১৪ ফুট গভীর। বিজ্ঞানীরা সে আমলে খাদের গভীরতা মাপার জন্য ব্যবহার করেছিলেন বিভিন্ন ধরনের সাউন্ডিং মেশিন বা শব্দ উৎপাদক যন্ত্র।
১৮৯৯ সালে চালানো আরেক অভিযানে পাওয়া গেল নতুন তথ্য মারিয়ানা ট্রেঞ্চ প্রায় ৩১ হাজার ৬১৪ ফুট গভীর। বিজ্ঞানীরা সে আমলে খাদের গভীরতা মাপার জন্য ব্যবহার করেছিলেন বিভিন্ন ধরনের সাউন্ডিং মেশিন বা শব্দ উৎপাদক যন্ত্র।
১৯৩১ সালে সহজ এবং আগের তুলনায় নির্ভুলভাবে বিজ্ঞানীরা মাপার চেষ্টা করেন বিশ্বের সবচেয়ে গভীর স্থান আসলে কতটা গভীর। পরীক্ষায় ব্যবহার করা হয় ‘চ্যালেঞ্জার ২’ নামের একটি জাহাজ। এতে চড়ে বিজ্ঞানীরা মারিয়ানা খাদের গভীরতা মাপেন ‘ইকো সাউন্ডিং’ বা ‘প্রতিধ্বনি গ্রহণ’ পদ্ধতিতে। সেই দুঃসাহসিক অভিযানে জানা গেল খাদটির সর্বোচ্চ গভীরতা_৩৫ হাজার ৭৫৭ ফুট। এরপর চালানো হয়েছে আরো অভিযান এবং ভুল প্রমাণিত হয়েছে আগের মাপা গভীরতাগুলো। আধুনিক বিজ্ঞানীরা এখন জানেন_মারিয়ানা ট্রেঞ্চ প্রায় ৩৬ হাজার ৭০ ফুট গভীর।
মারিয়ানা ট্রেঞ্চ
Reviewed by ভূগোল প্রেমী
on
মার্চ ১৭, ২০১৭
Rating: